আইন মানছে না দেশের প্রায় শতভাগ ইটভাটা * দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটা চালু আছে * ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই
নিয়ম না মেনে চলা হাজার হাজার ইটভাটা দেশে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। দেশের প্রায় ৭ হাজার ইঁভাটার মধ্যে বেশির ভাগই নিয়মবহির্ভূতভাবে চলছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। অথচ ওই আইন মানছে না দেশের প্রায় শতভাগ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। ওসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। ওই ইটভাটাগুলোতে বছরে ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে। মূলত কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ বা টপ সয়েল কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। ওসব ইটভাটা শুধু উর্বর মাটি ধ্বংস করছে না; বায়ু, মাটি ও প্রকৃতির স্থায়ী ক্ষতি করছে। প্রভাবশালীদের মালিকানা ও ছত্রছায়ায় চলছে ওসব ইটভাটা। পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইটভাটা দেশের পরিবেশ দূষণের বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে ইটভাটা। তাছাড়া ইটভাটাতে কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশের মাটি কেটে নেয়ায় জমির উর্বরতা কমার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক আমদানিতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। তাছাড়া দেশে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ইট তৈরি করা হচ্ছে তাতে জনস্বাস্থ্যেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় আমদানিকৃত নিম্নমানের কয়লা। ওই কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণ ছাই তৈরি হয়। ফলে ইটভাটা থেকে বায়ুমন্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। সূত্র জানায়, পরিবেশ রক্ষায় কৃষিজমির টপ সয়েল দিয়ে প্রচলিত ইটের ব্যবহার কমাতে হবে। বরং ব্যাপকভাবে নদীর চরের বালু দিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর বালু ইট তৈরির কাজে লাগানো হলে নদী খননেরও কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে। বর্তমানে খনন করে নদীতীরে বালু রাখার কারণে তা আবার নদীতে গিয়েই পড়ছে। তবে ব্লক ইট ব্যবহার বাড়াতে হলে সরকারকে বিশেষ ঋণসুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। সারাদেশে গত জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৫১টি ব্লক ইটের কারখানা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হয়েছে ৮৮টি কারখানা। ওসব কারখানায় যে ইট তৈরি হচ্ছে তা মোট ইটের চাহিদার ৫ শতাংশও মেটাতে পারছে না। সেজন্যই পুরনো ইটভাটা বন্ধের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিকল্প ইট তৈরিতে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। সূত্র আরো জানায়, প্রচলিত ইটভাটার পরিবর্তে সারা দেশে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির কারখানা গড়ে তুলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে ব্লক ইট তৈরির বেশকিছু কারখানা গড়ে উঠলেও এ ব্যাপারে সরকারের খুব বেশি উদ্যোগ নেই। ইটভাটা পুরোপুরি তুলে দেয়ার আগেই দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক ব্লক তৈরির কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়ে এর উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে বর্তমান ইটভাটার মালিকরাও হতে পারবেন ব্লক কারখানার উদ্যোক্তা। আর ইটভাটার শ্রমিকরাই সেখানে কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে সরকার পোড়া ইটের বিকল্প পণ্যের ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। চিমনিতে পোড়ানো ইটের বদলে ব্লক ইট বানাতে সরকারি-বেসরকারি কারখানার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সড়ক ছাড়া সরকারি সব নির্মাণকাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ইতোমধ্যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে অগ্রগতি কম। এদিকে পরিবেশবিদদের মতে, প্রচলিত রেড ব্রিকসের ক্ষতিকর দিক মূল্যায়ন করে সারা দেশে পরিবেশবান্ধব ইট ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বর্তমানে কৃষি মাটির বিকল্প নদীগর্ভ থেকে উত্তোলিত বালু দিয়ে দেশে সীমিত পরিসরে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয় মূল্যের ব্লক ইট। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাটির বিকল্প উপকরণ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে। নদী খনন থেকে উঠে আসা বালুর সঙ্গে কিছু উপকরণ ব্যবহার করে উন্নতমানের ইট তৈরি হয়। পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সরকারকে আর্থিক সহায়তা এবং ঋণসুবিধা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
অবৈধ ইটভাটায় ঘটছে মারাত্মক বায়ু দূষণ
- আপলোড সময় : ০৫-১১-২০২৪ ১২:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৪ ১২:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ